বৃত্তিই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় মাসুদের

প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠান

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার অদম্য মেধাবী ডা. মাসুদ রানার জীবনের গল্পটা অনেকের চেয়ে আলাদা। আলাদা এ কারণে যে, ছোট থেকে নানা প্রতিকূলতা দেখেছেন তিনি। সাহস নিয়ে প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। তাঁর জীবনের নানা গল্প উঠে আসে গতকাল ৮ ডিসেম্বর ২০২০ প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে।

মাসুদ রানা বলেন, কণ্টকাকীর্ণ জীবনে প্রথম স্বপ্নটা দেখান বাবা-মা। তাঁদের জমাজমি বলতে কিছু ছিলো না। অন্যের জমি চাষাবাদ করে জীবন ধারণ করতেন। মা গবাদিপশু পালন করতেন। দুই ছেলেকে পড়াশোনা করানো প্রাণান্ত চেষ্টা ছিল তাঁদের। শিক্ষাজীবনের প্রথমে খরচ কম ছিলো। কিন্তু যতই ওপরের ক্লাসে যাচ্ছিলাম ততই খরচ বাড়ছিল। বাবা-মা নিরাশ হতে শুরু করলেন। কঠিন পরিশ্রম করে ২০০৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলাম। সারা গ্রামে সাড়া পড়ে গেল। কিন্তু আমার মনে তখনো দুশ্চিন্তা গ্রাস করছে। তখন প্রথম আলোর প্রতিনিধি আমাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন। পরে ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি’ পাই। এই বৃত্তি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। মন থেকে মেঘ সরে যায়।’

তাঁর ভাষায়, বৃত্তি পেয়ে বাবা-মা স্বস্তি পান। আমি শুরু করি উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা। আমি জানতাম, উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল না করলে স্নাতক পর্যায়ের বৃত্তি হারাবো। তাই কঠোর অধ্যাবসায় অব্যাহত রেখে উচ্চমাধ্যমিকেও জিপিএ-৫ পাই। স্নাতক পর্যায়েও ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি’দেওয়া হয়। সেই সহয়তায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেছি। এ জন্য আমি প্রথম আলো ট্রাস্ট ও ব্র্যাক ব্যাংকের কাছে কৃতজ্ঞ।

প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠান

হার না মানা মাসুদ রানা ৩৯তম বিসিএসে (স্বাস্থ্য) সার্জন পদে সুপারিশকৃত হন। বর্তমানে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহকারী সার্জন হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে প্রচুর লোক আসে, তাঁদের যথাসাধ্য চিকিৎসা করি। যখন যেখানে যাই অসহায় মানুষের চিকিৎসা করি। বিনিময়ে মানুষের অনেক দোয়া পাই।’ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে মাসুদ রানা বলেন, আরও ভালো কিছু করতে চাই। সে জন্য উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চাই যাতে করে সেবার মান আরও বাড়াতে সহায়ক হবে। এ জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।

সকল অদম্যদের জন্য কোনো পরামর্শ আছে কিনা জানতে চাইলে মাসুদ রানা জানান, আমরা যারা অদম্য মেধাবী প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসচ্ছল পরিবার থেকে উঠে আসি তাদের অসামান্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। বাবা-মাও অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন। খেয়ে না খেয়ে আমাদের জন্য পরিশ্রম করে যান। তাই তাঁরা যে স্বপ্ন দেখেন তা পূরণ করতে হবে। আমরা ভালো কিছু করলে তাঁদের চোখের কোনায় যে অশ্রুটুকু দেখা যায় তা কোটি টাকা দিয়ে কেনা যাবে না। এই আনন্দ অশ্রুই জীবনের বড় প্রাপ্তি।

প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে গিয়ে অনেকেই সাহস হারিয়ে ফেলেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে গিয়ে মাসুদ বলেন, ‘কখনো মনোবল হারানো যাবে না। সাহস রাখতে হবে। কারণ আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আমাদের পরিবার, সমাজের মানুষ। আমরা এমন কিছু করব না যাতে সবাই হতাশ হয়ে পড়ে। তা ছাড়া আমাদের যাঁরা সহযোগিতা করছেন তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। সব বাধা বিপত্তিতে সাহস রাখতে হবে।’

অনুষ্ঠানটি একযোগে প্রচার করা হয় প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেল, প্রথম আলোর ফেসবুক, প্রথম আলো এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক থেকে। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।