গুড়িহারি-কামদেবপুর আলোর পাঠশালা এলাকায় এক নামে পরিচিত

নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম গুড়িহারি শালবাড়ি। অনেকে শালবাড়ি নামটি শুনলে দ্বিধায় পড়ে, বলে কোন শালবাড়ি। আসলে নিয়ামতপুর উপজেলাতে শালবাড়ি নামে আরও দুটি গ্রাম রয়েছে। অন্য দুটি শালবাড়িগ্রাম থেকে গুড়িহারি শালবাড়ি গ্রামটি বিভিন্ন দিক থেকে একটু পিছিয়েই রয়েছে। বিগত কয়েক বছর আগেও গুড়িহারি শালবাড়ি গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের ছেলে-মেয়েরা বঞ্চিত হয়েছে শিক্ষার আলো থেকে। কারণ গুড়িহারি শালবাড়ি গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আশে পাশে প্রায় ৫-৭ কিলোমিটারের মধ্যে ছিলনা কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। তা ছাড়া গুড়িহারি শালবাড়ি গ্রামে মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিষ্টান সম্পদায় মিলে প্রায় ৫০০ পরিবারে ২৫০০ লোকের বসবাস। যার মধ্যে অধিকাংশ পরিবার দরিদ্র্য, অভিভাবকদের অসচেতনতা এবং বিদ্যালয় না থাকার কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে থেমে গিয়েছে অনেকের পড়াশোনা।

অবশেষে ২০১৫ সালে কয়েকজন সচেতন ব্যক্তির মাধ্যমে বাঁশ, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে নির্মাণ করা হয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করার এক বছর পর ২০১৬ সালে প্রথম আলো ট্রাস্ট সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। প্রথম আলো ট্রাস্ট, সামিট গ্রুপ ও অন্যান্য মহৎ ব্যক্তির মাধ্যমে গড়ে ওঠে বিদ্যালয়ের দুটি ভবন। শুধু তাই নয় ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রথম আলো ট্রাস্ট, সামিট গ্রুপ ও কিছু মহৎ ব্যক্তি অনেক কিছু দিয়ে গুড়িহারি শালবাড়ি গ্রামকে ঋণী করেছেন।

যেমন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার সুবিধার জন্য ২৮ টি সাইকেল, শীতে কম্বল, মশারি, ঈদে পোশাক, শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস আবার করোনাকালীন দুইবার ত্রাণ এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি। বিদ্যালয় থেকে এত সব পাওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুরজাহানের বাবা নূরজামান বলেন, ‘স্কুলে আসা-যাওয়ার জন্য সাইকেল পাওয়া যায় এটা এই প্রথম দেখলাম। আর এতে আমার মেয়ের স্কুলে আসা যাওয়ার অনেক সুবিধাই হয়েছে। কারন আমার বাড়ি থেকে বিদ্যালয় অনেক দূরে। সাইকেল পেয়ে আমার মেয়ে ও আমি খুবই আনন্দিত।আবার গ্রামেরই কিছু মহৎ ব্যক্তিবর্গ বিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য বিদ্যালয়ে সাড়ে তিন বিঘা জমি দান করেন। বর্তমানে গুড়িহারি শালবাড়ি গ্রামসহ আশোপাশের কয়েকটি গ্রাম নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৩৪ জন। যার মধ্যে রয়েছে মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী। যেখানে আগে কিছু মুসলিম শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কোন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করত না। সেখানে বর্তমানে ১৯ জন হিন্দু ও ১৬ জন খ্র্রিষ্টান ধর্মেরসহ মোট ১৩৪ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে।

বিদ্যালয়টি স্থাপন হওয়ায় গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবি মো. মোতাল্লেব হোসেন বলেন, ‘গ্রামে হাই স্কুল হওয়াতে লোকজন এখন শিক্ষার আলো পাচ্ছে। আগে স্কুল না থাকাতে দূরের কোন স্কুলে গিয়ে কিছু ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা করত এবং বিশেষ করে মেয়েদের দূরের স্কুলে পাঠাতে অভিভাবকরা ততটা ইচ্ছা বোধ করত না। কাজেই গ্রামের অনেক ছেলে মেয়েরা ঝরে পড়ত শিক্ষার আলো থেকে। গ্রামে স্কুল হওয়াতে গ্রামের সকলেরই অনেক সুবিধা হয়েছে। অন্যদিকে সাঁওতাল পরিবারের একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক জয়রাম টুডু বলেন, ‘স্কুলটা না হলে হ্যামা ঘেরে ছাওয়ালেরা পড়তে পাতোনা, স্কুলত কোন টাকা পয়সা দেওয়া লাগে না আবার স্কুলত যাওয়ার জন্য সাইকেলও দেওয়া হছে। স্কুলের জামা, পোশাক, মশারি, কম্বল আবার করোনার সময়ে দুইবার ত্রাণ পাছি হ্যামরা। তাই হ্যামা ঘেরে এখন পড়াতে আর ঝামেলা হয় না। ছাওয়ালেরাও এখন স্কুলত যাতে চাহে।'