সিনথিয়ার ‘অদ্বিতীয়া’ হওয়ার গল্প

সিনথিয়া খন্দকার ঊর্মি ২০১২ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পান। শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে। ২০১৭ সালে স্নাতক শেষ করেন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ওই বছরই স্নাতকোত্তর পর্যায়ে স্কলারশিপ পেয়ে যান ফ্রান্সের ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল সাইন্সে। ২০১৯ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করে প্যারিসে একটি বেসরকারি সংস্থা ‘দ্য ইউনিয়ন অব বিজনেস ইনকিউবেটরস’এ চাকরি পান। তিনি বর্তমানে এই সংস্থায় প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। দেখাশোনা করছেন ইউরোপিয়ান প্রজেক্টের তিনটি প্রকল্প। সিনথিয়ার এই সাফল্যের কথা ওঠে আসে ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’ নামক লাইভ অনুষ্ঠানে। ২২ নভেম্বর ২০২০, রোববার বিকেলে হয়ে গেল ভার্চুয়াল এই আড্ডা। ফ্রান্সের প্যারিস থেকে যোগ দেন সিনথিয়া।

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ অর্জনসহ সিনথিয়া শোনালেন তার অদ্বিতীয়া হয়ে ওঠার গল্প। তিনি বলেন, ‘এইচএসসি পাশ করার পর খুব শখ ছিল বৃত্তি নিয়ে বিদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার। বাবা ছিলেন টেইলার্স মাস্টার। দরিদ্র বাবার পক্ষে অত খরচ জোগানো কঠিন। বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্য ইন্টারনেট ঘেটেছি, বিভিন্ন দূতাবাসে ঘুরেছি। প্রথম আলো পত্রিকায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে বৃত্তির কথা জানতে পারি। ভর্তি পরীক্ষা দিলাম, স্কলারশিপও পেয়ে গেলাম। চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটাও খুব সুন্দর। প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বৃত্তি পাই। ভর্তি হয়ে ওই বছর জানতে পারি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর ২ জন নারী ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ বছর পড়ার সুযোগ পাবে। প্রাথমিক সিলেকশনে ৮৯ জন ছাত্রীর মধ্যে ৩৫ জনকে বেছে নেওয়া হয়। ওই ৩৫ জন থেকে চূড়ান্তভাবে ২ জনকে নেওয়া হল। আমি ওই ২ জনের একজন হলাম। বৃত্তি পেয়ে ২০১৫ সালে ফ্রান্সে গেলাম। অনার্স পাশ করে মনে মনে ইচ্ছা ছিল ফ্রান্সে মাস্টার্স করার আবেদন করি। ২০১৭ সালে স্কলারশিপ নিয়ে আবার ফ্রান্সে যাই। পড়াশোনা শেষ করে এখন প্যারিসে চাকরি করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্যারিসে আসার পর ৩ বছরের এক শিশুকে ইংরেজি শেখাতাম আর ওর কাছ থেকে ফরাসি ভাষা রপ্ত করি। পাশাপাশি ভাষা শেখার ক্লাবে যোগ দেই, সিনেমা দেখি। যারা বিদেশে পড়াশোনা বা চাকরি নিয়ে যেতে চান তাদের প্রতি পরামর্শ থাকল ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি ওই দেশের ভাষাও রপ্ত করতে হবে।’ দেশের জন্য বিশেষ করে তরুণদের নিয়ে কাজ করতে চান সিনথিয়া।

সকলের জন্য কোনো পরামর্শ আছে কিনা জানতে চাইলে সিনথিয়া জানান, ‘কখনো নিজের ওপর আস্থা হারানো যাবে না। সব বাধা বিপত্তিতে সাহস রাখতে হবে। সর্বোপরি যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। বড় হয়ে যেন অতীত না ভুলে যাই, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’

২০১২ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। প্রতি বছর পরিবারের প্রথম নারী অথচ দরিদ্র, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী এ রকম ১০ জনকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহায়তায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এ শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া শুরু হয়। ট্রান্সকমের সহায়তায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪২ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছে।

২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি এই শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেয়। নামকরণ করা হয়েছে ‘অদ্বিতীয়া’। আইডিএলসির সহায়তায় ২৬জনসহ এ পর্যন্ত মোট ৬৮ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছে। এ বছর যুক্ত হচ্ছেন আরও ১০জন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনও তাঁদের বৃত্তি দেয়।

অনুষ্ঠানটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেল, প্রথম আলোর ফেসবুক, প্রথম আলো এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।