নিজেকে বড় করার ইচ্ছাটাই জয়ের পথকে সুগম করে

অদম্য মেধাবী নাজমিন বেগম।

সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অদম্য মেধাবী নাজমিন বেগম সাহস নিয়ে প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছেন, সফলও হয়েছেন। চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করছেন। তাঁর চিকিৎসক হওয়ার গল্প উঠে আসে ১০ জুন ২০২১ প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে।

তাঁর জীবনের গল্প বলতে গিয়ে শুরুতেই নাজমিন বেগম বলেন, ‘প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই আমার প্রিয় পরিবার প্রথম আলো ও ব্র্যাক ব্যাংককে। আমি প্রথম আলো ট্রাস্ট-ব্র্যাক ব্যাংকের অদম্য মেধাবী হিসেবে নিজেকে অনেক গর্বিত মনে করি। যদি শুরু থেকে বলতে চাই তাহলে বলব, ২০১০ সালে এই পরিবারের সঙ্গে আমার পরিচয়। একজন সাঁতার না জানা মানুষ যদি সমুদ্রে পড়ে যায় তার যে অবস্থা হয়, তখন আমার একই অবস্থা হয়েছিল। প্রবল ইচ্ছা ও পরিশ্রমটাই ছিল আমার একমাত্র পুঁজি। আমার এই দু:সময় পাশে পাই ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টকে। আমাকে অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তির জন্য নির্বাচন করা হয়, যা আমাকে অদম্য সাহস জুগিয়েছে। সেই থেকে শুরু করে চিকিৎসক হওয়া অনেকটা স্বপ্নের মতো মনে হয়। যা হোক, আমি ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের একজন সদস্য হিসেবে অনেক গর্ববোধ করি। মানুষের সেবা করার যে স্বপ্ন ছিল তা তাদের জন্য সম্ভব হয়েছে।’

প্রবল ইচ্ছা ও কঠোর পরিশ্রম করে ২০১০ সালে মাধ্যমিক ও ২০১২ সালে উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পান নাজমিন বেগম। নির্বাচিত হন ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী হিসেবে। উচ্চমাধ্যমিক ও এমবিবিএস পর্যায়ে পান ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিলের শিক্ষাবৃত্তি। বর্তমানে তিনি সিলেটে অবস্থিত ইউনাইটেড ক্লিনিকে মেডিকেল অফিসার হিসাবে কর্মরত আছেন। ধরেছেন সংসারের হাল।

পাঁচ মাসে অন্তঃসত্ত্বা থাকা সত্ত্বেও করোনা পরিস্থিতিতে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছেন নাজমিন বেগম। তিনি জানালেন, ‘প্রথম আলো ট্রাস্ট ও ব্র্যাক ব্যাংক যেভাবে দু:সময়ে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, আমিও চেষ্টা করি আমার কাছে এসে কেউ যেন সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হয়।’

এখন নাজমিন কি স্বপ্ন দেখেন জানতে চাইলে বলেন, ‘ডাক্তার হওয়ার পর পোস্টগ্র্যাজুয়েট কোর্স করতে হয়। আমার ইচ্ছা খুব শীঘ্রই পোস্টগ্র্যাজুয়েট কোর্স শুরু করতে পারব। উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে মানুষের সেবা করব।’

পড়াশোনা চলাকালীন সময়ে মনোবল হারিয়ে যাওয়া বা ভেঙে পড়ার মতো কোনো অবস্থা হয়েছে কিনা। অথবা এখন যারা পড়াশোনা করছে তাদের জন্য কোনো পরামর্শ আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘আসলে নিজেকে বড় করার যে ইচ্ছাটা, সেটাই মানুষকে সবকিছু জয় করতে সহায়তা করে। আমার বেলায় যেটা হয়েছে, প্রতিদিন মনে হতো আমি হয়তো পারব না। কিন্তু আমি থেমে যাইনি।স্বপ্নপূরণের দিকে এগিয়ে গিয়েছি। বাধা বিপত্তি আসবেই। যত দিন বাঁচব এটা থাকবেই। তবে অতিক্রম করতে হবে। আসলে আমি কি চাই সেটার দিকে ফোকাস করতে হবে। আমার কি আছে, কি নাই সেদিকে তাকালে হবে না। ইচ্ছা শক্তিটাই বড়।’

চিকিৎসক হওয়ার পর নিজ গ্রামের মানুষের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে নাজমিন বেগম জানান, গ্রামের লোকজন সেবা নিতে আসে, বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নেন। এতে আমার ভালো লাগে। ইচ্ছা আছে গ্রামে একটা চেম্বার করার। এতে করে গ্রামের মানুষের মাঝে সেবা দিতে পারব।’ পরিশেষে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টকে আবারও কৃতজ্ঞতা জানান। দর্শকদের জানান ধন্যবাদ।

অনুষ্ঠানটি একযোগে প্রচার করা হয় প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেল, প্রথম আলোর ফেসবুক, প্রথম আলো এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক থেকে। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।