নদীভাঙা মানুষগুলোর বানে ভাসা কষ্ট

বগুড়ায় বন্যার্তদের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। গতকাল ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের বানিয়াযান স্পার এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

‘পরায় ৫০ বছর আগে বিয়া হইছিল আধানগর চরে। তার পরে ত্থাইকা চাইরবার নদী ভাইঙা ঘরবাড়ি সব হাইর‍্যা আইস্যা পড়ছি এই বান্দে। দুই ছাওয়াল আছে, হ্যারা বিয়াশাদি কইরা শহরে রিকশা চালায়। ১৫ বছর আগে স্বামী মরছে। মাইয়ার লগে আমি বান্দে থাকি। জামাই–নাতিই খাওয়ায়। করোনার মধ্যে জামাই-নাতিরও কাম নাই। হ্যার পরে বানের পানিই নামে না। কী যে কষ্ট।’ আন্না বেওয়ার বয়স এখন ৭০। জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোর সুখ–দুঃখের কথা ছায়াছবির মতো করেই বললেন। অনেক কষ্ট করেছেন জীবনে। তবে এবারে করোনাকালের অভাবের মধ্যে দীর্ঘ বন্যা যে কষ্ট দিয়েছে, তা আগে কখনো পাননি।

বগুড়ার ধুনট উপজোর ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের ১৮ কিলোমিটার লম্বা বানিয়াযান বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আরও কয়েক হাজার ‘নদীভাঙা’ পরিবারের মতো কুঁড়েঘর তুলে থাকেন আন্না বেওয়া। গতকাল শনিবার দুপুরে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া ১০০টি পরিবারের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়। ত্রাণ নিতে এসে ‘নদীভাঙা’ আন্না বেওয়া জানিয়ে গেলেন বানভাসি জীবনের চরম কষ্টের কথা।

ধুনট সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পূর্বে ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনার ভাঙনে ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের মানচিত্র থেকে আটটি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। এই আট গ্রামের লোকজনসহ প্রায় চার হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বানিয়াযান বাঁধে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে বন্যা শুরু হয়ে দুই দফায় প্রায় দেড় মাস পানি ছিল বাঁধের দুই পাশের বাড়িঘরগুলোতে। করোনাকালে বন্যার মধ্যে কাজকর্মের সুযোগ কমেছে। এখন নদীর চরে কাশবন কেটে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রির আশায় আছেন তাঁরা।

ত্রাণ নিতে আসা ময়না দাস (৮৫) রুগ্‌ণ শরীর নিয়ে ঠিকঠাক চলতেও পারেন না। স্বামী বিশু দাস ছিলেন গ্রাম পাহারাদার। মারা গেছেন পাঁচ বছর আগে। রেখে যাননি কিছুই। সব হারিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। একই রকম পরিস্থিতিতে পড়ে এখানে এসে আশ্রয নেন সুখী বেওয়া, দুখুনি বেওয়া, ফাতেমা বেওয়া, জাহানারা পাগলীসহ কয়েক হাজার পরিবার। ত্রাণ নিতে আসা এই নারীদের কষ্টের গল্পটা প্রায় একই রকম।

ত্রাণ পেয়ে শিমুলবাড়ী গ্রামের দিনমজুর আবুল কাশেম বলেন, ‘খুবই ভ্যাগাচ্যাকার মধ্যে আছি। কোথাও কামকাইজ নাই।’

গতকাল ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেন কলেজশিক্ষক জাহিদুর রহমান, বগুড়ার প্রথম আলো বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক এস কে কাব্যসহ অন্য বন্ধুরা।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭২০০১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।