বৃষ্টি এখন স্বাবলম্বী নারী

প্রথম আলো ট্রাস্টের অনলাইন আয়োজন ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’-পর্ব ৪।

নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের মেয়ে তামান্না ইয়াসমিন বৃষ্টি। তিনি তাঁর পরিবারে প্রথম নারী, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পেরেছেন। এই পেরোনোর পেছনে আছে নানা প্রতিবন্ধকতা। মনে সাহস নিয়ে সেই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেছেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) থেকে স্নাতক (সম্মান) শেষ করে বর্তমানে কাজ করছেন জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিস ঢাকায় অ্যাডমিন অ্যাসিস্ট্যান্ট (বিজনেস সাপোর্ট) হিসেবে। সেই গল্প জানালেন প্রথম আলো ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’ নামক অনলাইন অনুষ্ঠানে।

তামান্না বলেন, ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের মতো একটা আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পেছনে প্রথম আলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কারণ, এইউডব্লিউতে বৃত্তির বিষয়ে প্রথম আলো থেকেই জানতে পারি এবং প্রথম আলোতে বৃত্তির জন্য আবেদন করি। পরে বৃত্তি পেয়েও যাই। এই বৃত্তি আমার পড়াশোনাকে অনেক সহজ করে দেয়। এ জন্য প্রথম আলোর কাছে কৃতজ্ঞ।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের অনলাইন আয়োজন ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’-পর্ব ৪।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাংলা মাধ্যমে পড়া একজন মেয়ে এইউডব্লিউতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এবং পুরো ইংরেজি মাধ্যমে কীভাবে খাপ খাওয়ালেন জানতে চাইলে বলেন, ‘চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। সেই সঙ্গে এইউডব্লিউ থেকে প্রথম এক বছর ইংরেজির ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ খুব সহায়তা করেছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহুজাতিক সংস্কৃতির আদান-প্রদানের মাধ্যমে বহু কিছু শিখেছি, যা প্রতিনিয়ত কাজে লাগছে।’

তামান্নার স্বপ্ন ছিল গ্রামের দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করার। সেই লক্ষ্যেই তিনি এইউডব্লিউতে স্নাতকে অর্থনীতি (মেজর), ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (মাইনর) বিষয় হিসেবে বেছে নেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি আজ জাতিসংঘে কাজ করছেন। ভবিষ্যতে নিজের মতো করে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে গ্রামের অসহায়, অসচ্ছল ও যাদের এগিয়ে যাওয়ার সাহস দরকার, তাদের জন্য কাজ করবেন বলে জানান তিনি।

তামান্না আরও বলেন, ‘আজ আমি স্বাবলম্বী নারী। এর পেছনে মা-বাবার সাপোর্ট যেমন ছিল তেমনি এইউডব্লিউ ও প্রথম আলো স্বপ্নপূরণে পথ দেখিয়েছে। আমার মা-বাবা এখন আমাকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করেন। তাঁরা চান, আমি আরও উচ্চশিক্ষা অর্জন করে সমাজের জন্য কাজ করি। আমি যেন এটা করতে পারি, সে জন্য দোয়াপ্রার্থী।’

পরিশেষে সব অদ্বিতীয়ার উদ্দেশে বলতে চাই, ‘কোনো অবস্থাতেই মনোবল হারানো যাবে না। প্রচুর হার্ড ওয়ার্ক করতে হবে। এইউডব্লিউতে অনেক সুযোগ আছে, সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। নতুন কিছু করার চিন্তা করতে হবে। নিজের মধ্যে লিডারশিপ গ্রো করাতে হবে। তাহলে কোনো বাধাই আর বাধা মনে হবে না।’

২০১২ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। প্রতিবছর পরিবারের প্রথম নারী অথচ দরিদ্র, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী, এ রকম ১০ জনকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহায়তায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এ শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া শুরু করে। ট্রান্সকমের সহায়তায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪২ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এই শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেয়। নামকরণ করা হয়েছে ‘অদ্বিতীয়া’। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় ৩৬ জনসহ এ পর্যন্ত মোট ৭৮ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনও তাঁদের আবাসন, টিউশন ফি সুবিধাসহ নানা সুযোগ দেয়।

অনুষ্ঠানটি গতকাল ২৩ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার), বিকেল সাড়ে চারটায় একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেল, প্রথম আলোর ফেসবুক, প্রথম আলো এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।