অদম্য মেধাবী বর্ষা রানী

অদম্য মেধাবী বর্ষা রানী যে গ্রামে জন্মেছেন, সে গ্রামের কেউ উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্তও পড়াশোনা করেনি। ছোটবেলায় যখন স্কুলে যাওয়া শুরু হলো, স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষকদের ভালোবাসা ভীষণ টানত তাঁকে। সেই টান থেকেই পড়াশোনার প্রতি ভালোবাসার জন্ম হয়। বর্ষা যখন নবম শ্রেণিতে উঠলেন, তখন বুঝতে পারলেন যে পড়াশোনার জন্য বই কিনে দেওয়ার সামর্থ্য তাঁর পরিবারের নেই। তিনি মা–বাবার ওপর চাপও দিতে চাইতেন না। সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ধার নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা বুঝে বর্ষা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে পরীক্ষার ফি মওকুফের জন্য আবেদন করেন। কৃতজ্ঞচিত্তে বর্ষা বলেন, ‘সেদিন আমার স্কুলের স্যাররা আমাকে এ সুযোগ না দিলে আজ আমি এ পর্যায়ে আসতে পারতাম না।’

এসএসসিতে ভালো ফলের পর যেন বিপদ বেড়ে গেল। কীভাবে কলেজের খরচ জোগাবেন, সেই চিন্তায় যখন বর্ষা ও তাঁর পরিবার দিশাহারা, তখন প্রথম আলোর প্রতিনিধি তাঁকে নিয়ে পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন করেন। বর্ষা রানী অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তির জন্য মনোনীত হলেন। সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথটা মসৃণ হতে শুরু করল। বর্ষা বলেন, ‘২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে অদম্য মেধাবীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঢাকায় না গেলে আমার জীবনটা এমন হতো না। আমি সেই অনুষ্ঠানে এসে যেসব অদম্যের গল্প শুনলাম, তাদের গল্প আমাকে অনুপ্রাণিত করল। আমার কাছে মনে হলো, আমার তো কেবল পারিবারিক এবং আর্থিক প্রতিকূলতা, আমি তো শারীরিকভাবে সুস্থ, আমি কেন এগিয়ে যেতে পারব না! আমি এগিয়ে যাওয়ার সাহস পেলাম। যাঁদের সারা জীবন আমরা টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি, তাঁদের যখন অনুষ্ঠানে সামনাসামনি দেখলাম, সেই অনুভূতি তো একদমই অন্য রকম। সব মিলিয়ে বলা যায়, আমার ভাবনার জগৎ, আমার দেখার চোখ—সবকিছু পাল্টে গেল সেই দিনের সেই অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর। আমি নতুন করে স্বপ্ন দেখার সাহস পেলাম। আমার তখন কেবল মনে হচ্ছিল, আমাকে আবার ভালো ফল করতে হবে। আমাকে আবার ঢাকায় আসতে হবে।’

বর্ষা রানী ২০১২ সালে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও জিপিএ–৫ পেয়েছিলেন। সেবারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠে বর্ষা জানিয়েছিলেন, তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চান। তাঁর স্বপ্ন তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান। বর্ষা রানী বর্তমানে লালমনিরহাট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। বর্ষা তাঁর গ্রামের প্রথম সরকারি চাকরিজীবী। তাঁর জীবন থেকে যেন আরও অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন, সেই স্বপ্ন দেখেন অদম্য মেধাবী বর্ষা।