'এমন কাজ করতে চাই, যেন সবাই আমার কথা মনে রাখে'

তাসফিয়া জামান, অর্থনীতিতে স্নাতক, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন, চট্টগ্রাম।

‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে পড়ার সময়টা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়। আমি ইউনিভার্সিটি থেকে শিখেছি নিজেকে কীভাবে গড়ে নিতে হয়। এখনো যা আমার জীবনে কাজে লাগছে।’ কথাগুলো বলছিলেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে অর্থনীতি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থী তাসফিয়া জামান। ২৮ মার্চ ২০২২, বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অনলাইন আয়োজন ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’ অনুষ্ঠানে এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা জানাচ্ছিলেন তাসফিয়া। তাসফিয়ার মা–বাবা সব সময়ই পড়াশোনার জন্য মেয়েকে উৎসাহ দিয়েছেন, সাহায্য করেছেন। উচ্চমাধ্যমিকের পর গতানুগতিকভাবেই মা–বাবা চেয়েছেন মেয়ে ডাক্তার হোক, পরিচিতরা কেউ চেয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার হোক। নিজের মতো করে শিখতে চাওয়া, পড়তে চাওয়া তাসফিয়া তখনো বুঝে উঠতে পারছিলেন না কী করবেন। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন।

তখন একদিন হঠাৎ করেই এইউডব্লিউর কথা শুনতে পান। জানতে পারেন সেখানে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ আছে। তারপর খোঁজ নিয়ে যখন জানলেন এই ইউনিভার্সিটিতে বিদেশের মেয়েরাও পড়াশোনা করে, একধরনের আত্মবিশ্বাস পান। নিশ্চয়ই এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ভালো। তাসফিয়া মুগ্ধ হলেন যখন দেখলেন মেয়েদের ভর্তি পরীক্ষার সুবিধার জন্য এইউডব্লিউ কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু সেন্টার তৈরি করেছে আর সেই বিবেচনায় তাসফিয়ার পরীক্ষার সেন্টার ছিল বগুড়ায়। ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সময় দ্বিতীয়বার মুগ্ধ হলেন। এখানের ভর্তি পরীক্ষায় গতানুগতিক কেবল এমসিকিউ প্রশ্ন নেই। এখানে লিখিত পরীক্ষাও দিতে হয়েছে এবং সেই লিখিত প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর নেই। উত্তরের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী কেমন চিন্তা করে, কীভাবে নিজের মতো করে গুছিয়ে লিখতে পারে, কতটা নিজেকে উপস্থাপন করতে পারে, সেই বিষয়টি দেখা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাসফিয়ার ভাইভা হয় ঢাকায়। এবং অবশেষে তিনি ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান এইউডব্লিউতে।

শিক্ষার্থীজীবনের স্মৃতিচারণায় তাসফিয়া বলেন, ‘ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার পর প্রথম দিকে গিয়ে মনে হলো এত কষ্ট কেন? আমি অর্থনীতি নিয়ে পড়েছি কিন্তু আমাকে গণিতের সকল বিষয় নিয়ে পড়তে হয়েছে। এইউডব্লিউতে পড়াশোনার সব রকম এবং সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য শিক্ষার্থীদের তৈরি করে। তবে একটা কথা বলতেই হয়, এইউডব্লিউর বড়রা যাঁরা আছেন, তাঁরা খুব সহায়তা করেন। আর শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার না বললেই নয়। ছোট বাচ্চাদের যেমন একেবারে হাতে ধরে শেখানো হয়, কোনো শিক্ষার্থী যদি কোনো বিষয়ে দুর্বল হয়, তাদের ঠিক একই রকম যত্ন নিয়ে শেখান এইউডব্লিউর শিক্ষকেরা।’ পড়াশোনা জীবনের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো মেজর ও মাইনর বিষয় বেছে নেওয়া। এখন যাঁরা অদ্বিতীয়া আছেন, তাঁরা কীভাবে এ সিদ্ধান্ত নেবেন, তা জানতে চাওয়া হলে তাসফিয়া নিজের উদাহরণ দিয়েই বলেন, ‘মেজর বিষয় নেওয়ার সময় আমি মনে করেছি, ভবিষ্যতে অর্থনীতিবিষয়ক যে বিষয়গুলো আছে যেমন দারিদ্র্য বা দারিদ্র্য বিমোচন বা বাল্যবিবাহ রোধ, বিভিন্ন ধরনের যে সামাজিক সমস্যাগুলো বা যা–ই হোক না কেন, সে বিষয়গুলো নিয়ে সামনের দিনগুলোতে যেন কাজ করতে পারি, নিজেকে আমি তার জন্য তৈরি করছি। অন্তত নিজের জন্য হলেও আমি যেন এ সমস্যার সমাধান করতে পারি। কেউ যেন আমাকে নিয়ে, আমার কাজ নিয়ে ভাবে, যেন আমাকে, আমার কাজকে কেউ মনে রাখে, ভবিষ্যতে যেন আমার কথা বলে যে আমি সমাজ ও দেশের জন্য এ কাজগুলো করেছি।’

সমস্যাটা সমাধানের জন্য মেজর বিষয় নেওয়ার আগে একজন শিক্ষার্থীর উচিত নিজেকে জিজ্ঞেস করা, কোন বিষয় সে সবচেয়ে ভালো এবং তার আগ্রহের জায়গা কোনটা। সেই আগ্রহের বিষয়টি নিয়েই তার পড়াশোনা করা উচিত। কেননা যে বিষয়টি নিয়ে তার আগ্রহ আছে, সে বিষয়টি নিয়ে যদি সে না পড়ে, একপর্যায়ে পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তাই কোন বিষয়ে একজন শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা বেশি এবং ভবিষ্যতে সে নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চায়, এগুলো ভেবেই মেজর এবং মাইনর নেওয়া উচিত। ইতিমধ্যে মাস্টার্স পড়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তাসফিয়া। মাস্টার্সের পর এমফিল কিংবা পিএইচডি যত দূর সম্ভব তিনি পড়াশোনা করতে চান। মিষ্টি হেসে বলেন, ‘সারা জীবন আমি ছাত্রী থাকতে চাই, সারা জীবন শিখে যেতে চাই। সবার ভালো হবে এমন কাজ করতে চাই।’