মাদক ছেড়ে ভালো আছি

মাদককে না বলো।

‘মাদক নিরাময়কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছি। সেখানে সুবিধাবঞ্চিত ছোট বাচ্চাদের পড়াতাম। ভালো লাগে ওদের পড়াতে।’ জানালেন আনুশকা (ছদ্মনাম)। তিনি একসময় মাদকের অন্ধকার জগতে পা রেখেছিলেন।

তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি মেজো। পড়তেন শহরের নামকরা এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। স্কুলের অনেক বন্ধুই বলত, ইয়াবা খেলে রাত জেগে পড়াশোনা করা যায়। সেই অনেকের কথার সত্যতা পরখ করতেই ও-লেভেল পরীক্ষার আগে ইয়াবার সঙ্গে পরিচয় ঘটে তাঁর। পরিচয়ের পর ইয়াবাই হয়ে যায় আনুশকার প্রিয় বন্ধু।

মা-বাবা বুঝতে পেরে চিকিৎসা করিয়ে তাঁকে ভারতে পাঠিয়ে দেন। সেখানে মাদক সহজলভ্য নয়। তাই পড়াশোনাটা ভালো হয়। সমস্যা হয় এ-লেভেল শেষ করে যখন দেশে আসেন। একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আবার সখ্য হয় ইয়াবার সঙ্গে। মা-বাবার আদুরে মেয়ে হওয়ার কারণে টাকাপয়সাও আসত বেশ। তবে টাকার সংকট দেখা দিলেই অন্য পন্থা নিতেন। একবার তো মায়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তিন লাখ টাকা উঠিয়ে ফেলেছিলেন শুধু ইয়াবা কিনবেন বলে। এমনও হয়েছে, মায়ের স্বর্ণালংকার বিক্রি করে ইয়াবা কিনতে গেছেন আনুশকা।

আনুশকার কাছে জানতে চাই, আপনার হাতে ইয়াবা আসত কীভাবে? আনুশকা বলেন, তারা বাসায় এসে দিয়ে যেত। একদম হোম সার্ভিস। ধরেন, কোনো সিডির প্যাকেটে বা খাতার ভাঁজে করে দিয়ে যেত। শেষ দিকে তো আমি বাসাতেই ইয়াবা নিতাম। তারা বন্ধু সেজে আমার বাসায় এসে দিয়ে যেত।

আনুশকার মা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা অনুষ্ঠানে যাওয়া শুরু করেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ শুনতেন। রাজধানীর ধানমন্ডি ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে প্রতি মাসে আয়োজন করা হয় মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তার। এই অনুষ্ঠানটি দুটো ভাগে বিভক্ত। একটি হলো রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকের একান্ত কথাবার্তা ও চিকিৎসাসেবা গ্রহণ। আর দ্বিতীয়টি হলো নাম পরিচয় প্রকাশ না করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতামত ও আলোচনা। যদিও করোনা পরিস্থিতির কারণে মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সাময়িকভাবে বন্ধ আছে। তবে প্রতি মাসে দুইদিন অনলাইনে পরামর্শ সভা অব্যাহত আছে।

আনুশকা আরও বলেন, ‘সবকিছু বাদ দেওয়ার পরও আমি আবার স্লিপ করেছিলাম। এক মাসের মাথায় মা-বাবা বুঝতে পারেন। তারপর সোজা মাদক নিরাময়কেন্দ্র পাঠিয়ে দেন। সুস্থ হলাম। সেই থেকে মাদক ছেড়ে ভালো আছি।’