প্রিয়জন মাদকাসক্ত হলে গোপন করবেন না
মাদকবিরোধী সচেতনতা তৈরির কাজটি পরিবার করে থাকে। পরিবারের সদস্যদের ছোটকাল থেকেই বোঝানো উচিত মাদকের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে। যেসব পরিবারে অশান্তি লেগেই থাকে, বাবা মায়ের সঙ্গে অমিল থাকে, বিবাহ বিচ্ছেদ, সংসারে শান্তি নেই, সেই পরিবারের সন্তান মাদকাসক্ত হতে পারে। কোন সন্তান যদি সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে, পারিবারিক বন্ধন থাকে এবং বন্ধু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যারা সচেতন, সে সব ছেলেরা মেয়েরা মাদক গ্রহণ করে না। মাদকমুক্ত হতে হলে পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা রয়েছে। গত ৩১ মে সোমবার প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী অনলাইন পরামর্শ সভায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান এ কথা বলেন।
বিকেল চারটা থেকে আধা ঘণ্টা প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে মাদকবিরোধী অনলাইন পরামর্শ সহায়তা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়কারী মাহবুবা সুলতানা। অনলাইনে মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সভার এটি ছিল ২০তম আয়োজন।
মাদক গ্রহণ আনন্দের হলেও ছেড়ে দেওয়াটা অনেক কঠিন। কিন্তু তারপরও যদি কেউ মাদকাসক্ত থেকে ছেড়ে আসতে চান পরিবারের সদস্য বন্ধুদেরকে জানাতে হবে। মাদকমুক্ত হতে হলে সমন্বিত চিকিৎসা দরকার । পরিবারের সদস্যরা কীভাবে বুঝবেন যে তাদের প্রিয়জন মাদকাসক্ত হয়েছেন। এর উত্তরে ফারজানা রহমান জানান, মাদক গ্রহণ করার ফলে মানুষের ব্যক্তিত্বে বড় পরিবর্তন আসে। আচরণগত পরিবর্তন দেখা যায়। তার মেজাজ উগ্র হয়ে যায়। ঠিকমতো ঘুমায় না। সারাদিন দরজা বন্ধ করে রাখে এবং তার ঘরে কেউ যেতে পারে না। স্কুল কলেজে যাওয়ার ক্ষেত্রে সময়ের পরিবর্তন দেখা দেয়, বাসা থেকে টাকা পয়সা মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যায়। মাদকের কোন প্যাকেট, বা রাংতা পাওয়া যায়। শিরাপথে কেউ মাদক গ্রহণ করলে তার ইনফেকশন হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় গরমের মধ্যেও ফুলহাতা শার্ট পড়ে থাকে। শিক্ষার্থী হলে তার স্কুল কলেজের বেতন, কোচিং ফির টাকাপয়সা ঠিকমতো পরিশোধ করে না। এই সব লক্ষণ দেখে ধারণা করতে পারেন তার সন্তান বা প্রিয়জন মাদক গ্রহণ করছে।
অনেকে মনে করেন মাদকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করলে সন্তান মাদকাসক্ত হতে পারে এটাও ভুল ধারণা । ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ মাদকাসক্তের ইতিহাস থেকে দেখা যায় যে মাদকাসক্ত হলে তার মানসিক রোগ ও হতে পারে। যেমন ডিপ্রেশন, সিজোফ্রেনিয়া বা যৌন রোগ ও দেখা যায়। মাদকের কুফল কিন্তু ভয়াবহ । দেখা যায় মাদক গ্রহণের ফলে সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটে। অনেক সময় মাদকাসক্তরা চিকিৎসা নিতে ভয় পান। আত্মীয়স্বজন জেনে যাবে এই সব চিন্তা করেন। মাদকমুক্ত হতে এখন আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। চিকিৎসার পাশাপাশি নিয়মিত ফলোআপ প্রয়োজন হয়।
মাদকের পুনরাসক্তি প্রসঙ্গে ফারজানা রহমান বলেন, মাদকে পুনরাসক্তি হতে পারে। একবার বা একাধিকবার রোগী মাদকে পুনরাসক্তি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। তা হলো সময়: যেই সময়ে সে মাদক গ্রহণ করত সেই সময়ে সতর্ক থাকতে হবে। স্থান: যে জায়গায় মাদক গ্রহণ করত সেই জায়গা এড়িয়ে চলা।ব্যাক্তি: যাদের সঙ্গে বসে মাদক গ্রহণ করত তাদের এড়িয়ে চলা। রাজধানীর শেরে বাংলা নগর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিভাগ, এ ছাড়া দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিভাগে গিয়ে নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসা নেওয়া যায়।
অভিভাবকের জন্য তিনটি পরামর্শ দিয়েছেন, প্রিয়জন মাদকাসক্ত হলে গোপন করবেন না। ধৈর্য নিয়ে চিকিৎসা করলে অবশ্যই রোগী ভালো হবে । মাদকাসক্তকে বিদেশ পাঠাবেন না। কারণ বিদেশে গিয়ে ও অজানা কোন মাদক গ্রহণ করতে পারে। মাদকাসক্ত হলে বিয়ে দেবেন না। বরং সুস্থ হলে বিয়ে দিতে পারেন।