‘সুযোগসন্ধানীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে’

প্রথম আলো ট্রাস্টের পরামর্শ সহায়তা সভায় আলোচক ও শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাজধানীর বাড্ডায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের মিলনায়তনে।
ছবি: প্রথম আলো

পরীক্ষার ফল খারাপ হয়েছে; মন খারাপ। কিংবা পারিবারিক অশান্তি থেকে মুক্তি মিলছে না। এ রকম নানা কারণে অনেক শিক্ষার্থী নিঃসঙ্গতা, হতাশায় ভোগেন। এই সুযোগে একদল সুযোগসন্ধানী সম্ভাবনাময় যুবসমাজের হাতে তুলে দিচ্ছে মাদক। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী আন্দোলনের নিয়মিত কার্যক্রম পরামর্শ সহায়তা সভায় আলোচকেরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিজনেস স্কুল ও মেন্টাল হেলথ ক্লাবের সহায়তায় এই সভার আয়োজন করা হয়।

পরামর্শ দেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল।
ছবি: প্রথম আলো

সভায় আলোচকেরা আরও বলেন, মাদকের নেশা শুধু সম্ভাবনাময় একটি জীবনকে ধ্বংস করছে না, পরিবার, সমাজ তথা পুরো জাতিকেই গভীর খাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, ‘সাময়িক আনন্দ লাভের আশায় তরুণেরা নেশায় আসক্ত হয়। কিন্তু এই সর্বনাশা নেশাই ধীরে ধীরে তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। আমি আর আমি থাকি না। আমি বদলে যাই। সেই আমি নেশার টাকার জন্য গর্ভধারিণী মাকেও মেরে ফেলতে পারি।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের পরামর্শ সহায়তা সভায় মাদককে ‘না’ বলে শপথ নেন।
ছবি: প্রথম আলো

বর্তমান সময়ে বহুল প্রচলিত মাদক ইয়াবার ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে মোহিত কামাল বলেন, ‘আমাদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ওজন ১ হাজার ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম। কেউ যদি এক থেকে দুই বছর নিয়মিত ইয়াবা সেবন করে, তার মস্তিষ্কের ওজন ১০০০ গ্রামে নেমে যায়। এটা ভয়ংকর ক্ষতি। সহায়তা, ভালোবাসা ও সুচিকিৎসা দিয়ে মাদকাসক্তি থেকে যে কাউকে মুক্ত করা সম্ভব।’

প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাঁরা মানসিক স্বাস্থ্য ও মাদকাসক্তির নানা বিষয়ে প্রশ্নে করেন।

সভায় এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করছেন।
ছবি: প্রথম আলো

এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ভালো ছাত্র হিসেবে পরিচিতি আছে। হঠাৎ করেই আমার পরীক্ষার ফল খারাপ হচ্ছে। এতে আমি হতাশায় ভুগছি। এ থেকে মুক্তি পেতে আমি এখন বেশি বেশি ঘুমাই।’ আরেক শিক্ষার্থীর বক্তব্য ছিল, ‘আমি সময়ের কাজ সময়ে করতে চাই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে হয়ে ওঠে না। এর ফলে আমি মাঝেমধ্যেই বিষণ্নতায় ডুবে থাকি।’

এসব প্রশ্নের উত্তরে মোহিত কামাল মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, মনের স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে দেহের স্বাস্থ্য ভালো হবে না। টেকসই উন্নয়নের জন্যও মানসিকভাবে ফিট থাকতে হবে। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই শীর্ষে চলে যাওয়া যায় না। সফল হতে হলে কষ্ট করতে হবে। প্রতিটি মুহূর্তকে ভালোভাবে ব্যবহার করে সময়ের নায়ক হয়ে উঠতে হবে। নেতিবাচক আবেগের চর্চা বাদ দিয়ে ইতিবাচক আবেগ—মায়া, মামতা, ভালোবাসাচর্চার পরামর্শ দেন তিনি।

আয়োজকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক এইচ এম জহিরুল হক বলেন, সৎ ইচ্ছা হলো সবচেয়ে বড় শক্তি। ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকলে যেকোনো নেশা থেকে মুক্ত থাকা যায়। মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য সংস্কৃতি ও খেলাধুলাচর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

পরামর্শ সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।