শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি আব্দুস সোবহান ব্যাপারী

আব্দুস সোবহান ব্যাপারী

আব্দুস সোবহান ব্যাপারী ২০০০ সালের দিকে নামহীন একটি চরে বসবাস করতে আসেন। এর আগে ঝুনকার চরে বসবাস করেছিলেন। ২০০২ সালে বন্যায় বরুয়া, রলাকাটা, কালীর আলগা, ঝুনকার চরে মানুষের বসতভিটা ভেঙে গেলে এ চরে কাশিয়া কেটে ঘর তৈরি করেন বন্যার্ত লোকজন। পরে ২০০৪ সালে চরবাসীরাই এই চরের নাম দেন প্রথম আলোর চর। এই চরের প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুস সোবহান ব্যাপারী।

প্রথমত চরটিতে মাত্র ১৬টি পরিবার নিয়ে যাত্রা শুরু করে। দুধকুমার নদের পূর্ব দিকে প্রথম আলোর চর। এটি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের রসুলপুর মৌজায়। ব্রহ্মপুত্রের কোল ঘেঁষে ২৫ বছর আগে জেগে ওঠে এই চরটি। দৈর্ঘ্যে ২ কিলোমিটার, প্রস্থে ১ কিলোমিটার। কুড়িগ্রাম শহর থেকে দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। পাশেই ভারতের আসাম।

যত দিন যায়, চরের জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। চরের শিশুরা নদীতে মাছ ধরা , মাঠে গরু চড়ানো ও ক্ষেতে খামারে কাজ করতে থাকে। মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ে দেওয়া শুরু হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষিত করতে না পারলে, চরের ভাগ্য পরিবর্তন হবে না। সোবহান ব্যাপারীসহ সাংবাদিক সফিখান এটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। এই চরে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা দরকার। সেই ভাবনা থেকে বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগ করতে শুরু করেন তাঁরা। এলাকাবাসীকে নিয়ে আলোচনাও করেন। পরে চরবাসীর সম্মতিতে সোবহান ব্যাপারী ১৬জন শিশু নিয়ে একটি ছোট ছনের ঘরে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন । ওই ঘরে পাঠদানের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জায়গা সংকুলান হতো না। পাশের একটি চরের বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নদী ভাঙনের কবলে পড়লে, আশ্রয়কেন্দ্রটি প্রথম আলো চরে এনে বিদ্যালয়ের ঘর তৈরি করার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। পরে চরের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে কাধে কাধ মিলিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ঘরটি নিয়ে আসেন।

স্থানীয়ভাবে ও প্রথম আলোর সহায়তায় বিদ্যালয়টি আরেকটু স্থায়ীত্ব পায়। ২০০৯ সালে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে বিদ্যালয়টিকে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়ে। নামকরণ করা হয় প্রথম আলোর চর আলোর পাঠশালা নামে । বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে পাকা মেঝে ও টিনের চালার ভবন রয়েছে তিনটি। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭০ জন। শিশু শ্রেণি থেকে অস্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হচ্ছে। শিক্ষকের সংখ্যা ১০জন।

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে বহুদিন শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি এ রকম অবহেলিত কয়েকটি এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। সামিট গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় প্রথম আলো ট্রাস্ট কুড়িগ্রামে প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালাসহ ৬টি স্কুল পরিচালনা করছে।