উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেলেন সেই মুক্তি

রাজশাহী আলোর পাঠশালার সাবেক শিক্ষার্থী মাহফুজা খাতুন মুক্তি ।

শতভাগ বাল্যবিবাহের গ্রাম পদ্মা পাড়ের দুর্গম সেই চর-খিদিরপুরের কথা মনে আছে? সেই চর, যেই চরের চারপাশে ভারতীয় সীমানা আর একপাশে প্রবল উত্তাল পদ্মা। যেই চরে যাওয়ার একমাত্র পথে অশান্ত নদী উত্তাল হয়ে উঠলে, মাঝি নিজেই যেখানে দিশা খুঁজে পেতেন না। চর-খিদিরপুরের মানুষেরা জানতেনই না যে প্রাথমিকের পরেও পড়াশোনা করা যায়। মাহফুজা খাতুন মুক্তি সেই গ্রামের প্রথম মেয়ে যিনি অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পুরো গ্রামকে অবাক করে দিয়েছিলেন। রাজশাহী থেকে প্রতিদিন জীবন হাতে নিয়ে যে সকল শিক্ষকেরা চরখিদিরপুরে পড়াতে আসতেন, সেদিন সেই শিক্ষকেরা মুক্তিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেন। সেই মুক্তি মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রাজশাহীর শাহ মখদুম কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়। চলতে থাকে পড়াশোনা।

এইবারের এইচএসসি পরীক্ষায় মুক্তি জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পরীক্ষার ফলাফল জানাতে আবারও ছুটে গেছেন সেই আলোর পাঠশালার শিক্ষকদের কাছে। মুক্তির ফলাফল শুনে শিক্ষকেরা আরও একবার কেঁদেছেন। এই কান্না আনন্দের, গর্বের, বিজয়ের। মুক্তি বিশ্বাস করেন, এই শিক্ষকেরা না থাকলে তিনি কখনোই আজকের দিন দেখতে পেতেন না। আর শিক্ষকেরা বিশ্বাস করেন, মুক্তি আরও সফল হবে। মুক্তি হবে সকলের আলোর মশাল।

জীবনে কি হতে চান জানতে চাইলে মুক্তি জানান, যত দূর সম্ভব পড়াশোনা করে যেতে চান এবং জীবনে আলোর পাঠশালার শিক্ষকদের মতো শিক্ষক হতে চান। কেন আলোর পাঠশালার শিক্ষকদের মত? আগ্রহ হলো জানতে। উত্তরে মুক্তি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের মেয়েদের তো বিয়ে হয়ে যেত ছোটবেলায়। এই স্যার-ম্যাডামেরা না থাকলে আমাদের জীবন আজ এমন হত না। একবার আমাদের নদীভাঙনে আলোর পাঠশালার স্কুলঘরটি ভেঙে গেল। তখন তো আমাদের পড়ানোর কোনো জায়গা নেই। সেই সময়েও স্যার-ম্যাডামেরা রাজশাহী থেকে এসেছেন। নদীর পাড়ে শীতের ঠান্ডা বাতাসের মধ্যেও আমাদের পড়িয়েছেন। আমরা সব সময় কৃতজ্ঞ থাকব আলোর পাঠশালার শিক্ষকদের কাছে।’