শতভাগ উপস্থিত থাকা আফসানা এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন

ক্লাসে শতভাগ উপস্থিতর জন্য ২০১৮ সালে পুরস্কার পান আফসানা মিমি।

প্রথম আলো ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থী আফসানা মিমি গুড়িহারী শালবাড়ি গ্রামের মোকলেছুর রহমানের (ননী বাবু) প্রথম মেয়ে। মোকলেছুর রহমান পেশায় একজন কৃষক। নিজের জমি-জমা অতি সামন্য। এই সামান্য জমি দিয়ে মেয়ের পড়ালেখা করানো তো দূরের কথা, সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। সংসারের খরচ বহন করতে মাঝে মধ্যে দিনমজুরের কাজও করতে হয় তাঁকে। তাই মেয়ের পড়ালেখার খরচ বাঁচাতে ২০১৭ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালায়। কারণ তিনি জানতেন আলোর পাঠশালাতে পড়াতে কোনো খরচ হয় না।

বিদ্যালয়ে খেলাধুলা করেন শিক্ষার্থীরা।

আফসানা মিমি পড়ালেখায় বেশ মনোযোগী। সেই সঙ্গে বিদ্যালয়ে তাঁর উপস্থিতিও শতভাগ। ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পড়ালেখা চলাকালীন আফসানা মিমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে মাত্র একদিন অনুপস্থিত ছিল। সপ্তম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চার বছরে বিদ্যালয়ে আর একদিনও অনুপস্থিত হয়নি। বিদ্যালয় থেকে পেয়েছে শতভাগ উপস্থিতি পদক ও সনদ এবং শিক্ষাবৃত্তি। আফসানা মিমি ২০১৯ সালে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৪.২৯ অর্জন করেন।

বিদ্যালয়ে শতভাগ উপস্থিতি থাকা আফসানা এবার (২০২২) এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিদ্যালয়ে শতভাগ উপস্থিতির পাশাপাশি তিনি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন রকম কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেন। যেমন ফুলবাগানে পরিচর্যা ও নিয়মিত ফুলগাছে পানি দেওয়া, স্কাউট,সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলায়, লাইব্রেরিতে বই পড়া, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ‘বইপড়া’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ। এমনকি নিজের বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করে নিজের পরিবারকে সচেতন করেছেন।

নিজের স্বুল আলোর পাঠশালার উইনিফর্ম পড়ে আফসানা মিমি।

আফসানা বলেন, ‘আমি আলোর পাঠশালাতে ভর্তি হওয়ার পর আমার কাছে বিদ্যালয়ের নিয়মকানুন খুব ভালো লাগে। তাই প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসতে আমি খুব আগ্রহী ছিলাম। এমনকি বিদ্যালয় ছুটির দিনগুলোতে আমার বাড়িতে মন টিকত না। তা ছাড়া আমার পরিবার ততটা সচ্ছল নয়, তাই নিজে পড়ালেখা শিখে পরিবার ও দেশের জন্য কিছু করার জন্য চেষ্টা করছি। এবার আমি এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। বিশেষত আমি আমার বিদ্যালয় তথা আলোর পাঠশালার প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। কারণ আমার পড়ালেখার জন্য কোণ খরচ দিতে হয়নি বরং বিদ্যালয় থেকে পেয়েছি অনেক কিছু যেমন শিক্ষাবৃত্তি, স্কুল ড্রেস, শীতের সময় কম্বল, করোনার সময় ত্রাণ, ঈদের সামগ্রী ইত্যাদি।’